বৃহস্পতিবার, ২৩ মে, ২০১৩

প্রথম আলো

মুরাদ রনি

এই লেখাটি হয়তো কয়েক সপ্তাহ আগেই লেখা উচিৎ ছিলো, তাই শুরুতেই সবাইকে জানিয়ে রাখি আমি কোনো ব্যাপারে চট করে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারিনা। আমার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের জন্য হোক আর একজন বৈজ্ঞানিক গবেষক হবার কারনেই হোক আমি যেকোন বিষয় সম্পর্ক একটি প্রাথমিক ধারনা নেই এবং ঘটনাপ্রবাহ মনোযোগ সহ লক্ষ্য করি তারপর প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত যাচাই বাছাই করে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেই। এভাবে যে আমি সবসময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি তেমনটি ভাবার কোন সুযোগ থাকছে না, তবে ফলাফল যাই হোক না কেনো এতে আমার আত্মতৃপ্তি থাকে, আফসোস কম হয়!
গত কিছুদিন ধরে 'প্রথম আলো' পত্রিকার জনমত জরিপ নিয়ে পক্ষে- বিপক্ষে নানা যুক্ত তর্ক খুব মনোযোগ দিয়ে পড়েছি, অবশেষে মনে হলো এবার কিছু বলার সময় হয়েছে
প্রথম আলো একটি তৃতীয় সংস্থা দ্বারা পরিচালিত জরিপ ও তার ফলাফল বেশ ফলাও করে প্রচার করেছে।এমন জরিপ পশ্চিমা বিশ্বেও লক্ষ্য করা যায়।
যেহেতু জরিপ ও তার গুণগত মান নিয়ে অনেকেই লিখেছেন তাই আমার আলোচনার বিষয় প্রথম আলোর জরিপ নয় বরং 'প্রথম আলো' স্বয়ং।
প্রথম আলোর জরিপটি একটি কোয়ান্টিটেটিভ রিসার্চ এবং তার ফলাফলও সেভাবেই প্রকাশ কর হয়েছে তার বিপরীতে আজ আমি 'প্রথম আলো'র কোয়ালিটেটিভ রিসার্চ করতে চাইবো।
প্রথম আলো যখোন প্রথম প্রকাশিত হয় তখন আমি হাই স্কুলের ছাত্র, মতিয়ুর রহমান নামে 'ভোরের কাগজের' এক সাংবাদিক কয়েকজন তরুণ ও প্রতিশ্রুতিশীল সাংবাদিকদের নিয়ে নতুন একটি দৈনিক বাজারে আনেন যার নাম 'প্রথম আলো'।
শুরু থেকেই প্রথম আলোর গেট আপ, মেক আপ, ছবি, ফন্ট পাঠকদের নতুনত্ত্বের স্বাদ দিয়েছে। যদিও নিয়মিত প্রথম আলোর সাথে অতিরিক্ত ম্যাগাজিন দেবার ধারনাটি ভোরের কাগজ থেকে ধার করা!!
এর পর থেকে প্রথম আলো'র জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়তে থাকে, প্রতিযোগিতায় অন্যান্য পত্রিকাগুলো পিছিয়ে যেতে থাকে। এমন সময় প্রথম আলো দুটি কাজ করতে থাকে:
১. গণিত অলিম্পিয়াড, ভাষা- প্রতিযোগ, এসিড ভিক্টিমদের জন্য সহায়তা তহবিল তৈরি করে আমাদের মনে একটি ধারনার জন্ম দেয় যে প্রথম আলো ভালো কাজ করে।
এর কিছুদিন পর তারা একটি নতুন পাঞ্চলাইন চালু করে তা হলো- 'যা কিছু ভালো তার সাথে প্রথম আলো' অর্থাৎ তারা এই ধারনাটিকে স্থায়ীরূপ দিতে চাইলো- প্রথম আলো যাদের সাথে আছে তারাই শুধু ভালো!
মতিয়ুর রহমান নিজে বাম রাজনীতি করেছেন, তিনি যখন ধনিকশ্রেনির হয়ে পুঁজিবাদকে আপনার আদর্শ মানেন তখন বুঝে নিতে হয় তিনি জেনে বুঝেই এমনটি করেছেন। এটি ঢালাও কোনো অভিযোগ নয়, গত এক দশকে প্রথম আলোর কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তাদের সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা আছে, শুধু মাত্র একটি পত্রিকা হয়ে থাকাটাকেই তাদের উদ্দেশ্য নয়। আজ তাই প্রথম আলো একটি মাল্টি ইন্ডাসট্রিয়াল প্রজেক্টের নাম।
সুতরাং প্রথম আলো যখন যা কিছু করে তার পেছনে তাদের নিজস্ব স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কিছু থাকে। এ বিষয়ে একটি উদাহরণ দিতে চাই- ২০০৬ সালের মে মাসে বিডি ফুডসের বহুল সমালোচিত হেরোইন পাচার কেলেঙ্কার যৌথ ভাবে ফাঁস করে দেয় ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো। বিডি ফুডসের একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার কাছ থেকে শোনা- সেই বছর ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো আয়োজিত সেরা শিল্প উদ্যোক্তা- ২০০৬ এ তাদের জন্য নির্ধারিত চাঁদা দিতে অস্বীকার জানায় বিডি ফুডস, এর পরের ঘটনা সবার জানা। আমি মনে করিনা যে চাঁদা না দেয়ায় বিডি ফুডসকে ফাঁসানো হয়েছে, বরং তারা যে অপরাধ বছরের পর বছর করে এসেছে প্রথম আলো তা জানার পরও নিশ্চুপ ছিলো, যখ
ন তাদের স্বার্থে আঘাত লেগেছে তখন তারা সেটি প্রকাশ করেছে।
২. দ্বিতীয় যে কাজটি করেছে আমার কাছে সেটি সবচেয়ে ভয়ংকর। শুরু থেকেই প্রথম আলো আমদের দেশের রাজনিতিকে বিরাজনৈতিকীকরন প্রক্রিয়ার দিকে নিয়ে গেছে। তাদের কলামিস্ট, তাদের নিউজ ডেস্ক এমনভাবে সাজানো যে সেটি প্রতিমুহূর্তে জনগণকে মনে করিয়ে দিতে চায় রাজনীতি দিয়ে কিছু হবে না! রাজনীতি পচে গেছে, সব কিছু চলে গেছে নষ্টদের অধিকারে। মানছি গত দুই দশকে আমাদের রাজনীতিবিদেরা আমাদের এমন কিছু দিতে পারেননি যা আমদের আশান্বিত করবে। কিন্তু এই রাজনীতিই পারে আমাদের সাধারন মানুষের মুক্তির, উন্নয়নের বারতা নিয়ে আসতে- এই সত্যটি খুব কৌশলে আমদের থেকে দুরে সরিয়ে রাখছে প্রথম আলো। অতীতে বা বর্তমানে যখনই দেশের জন্য কোন দুর্যোগ এসেছে প্রথম আলো আমদের মনে করিয়ে দিয়েছে এই সংকটের দায় শুধুমাত্র রাজনীতিকের। একবারও মনে করিয়ে দেয়নি এই পচে যাওয়া রাজনীতিকে বাঁচাবার জন্য আমরা কি করেছি বা আমাদেরও কিছু করার আছে! রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য প্রথম আলোই বা কি করেছে বা করছে।
এখন প্রশ্ন হতে পারে এই বিরাজনৈতিকীকরনে প্রথম আলো কিভাবে লাভবান? আমার কাছে উত্তরটা পরিস্কার, এই বিরাজনৈতিকীকরনের ফলে আমদের মধ্যে তথাকথিত সুশিল ও নিরপেক্ষ হবার প্রতিযোগিতা শুরু হবে, আমরা সবাই মুখ- চোখ শক্ত রেখে প্রবল মানবিক বিপর্যয়ের মাঝেও লাশের সংখ্যা মিলাবো, টক শোতে যাব আর "বদলে যাও, বদলে দাও" ট্যাগ লাইন যারা আনলো তারা নিজেরা না বদলে গিয়েও আমদের ঠিকই বদলে ফেলবে। আজকে ফেসবুক বা টুইটার ব্যবহারকারী হাজারো তরুনের পলিটিক্যাল ভিউ: "আই হেইট পলিটিক্স" তো এই ব্যাপক বিরাজনৈতিকীকরন ক্যাম্পেইনের ফলাফল। তাই যুদ্ধাপোরাধিদের ফাঁসির দাবিতে যখন তরুন সমাজ রাস্তায় নেমে এলো, গণজাগরন মঞ্চ হলো, সবার মাঝে রাজনৈতিক সচেতনতার ঘুমন্ত চারাগাছটি বেড়ে উঠতে শুরু করলো তখন সেইসব সুশিল বা প্রথম আলোদের যে গায়ে জ্বালা ধরবে এটাই স্বাভাবিক।
অতএব, বন্ধুগন সময় হয়েছে প্রথম আলোকে চিনে রাখার-
এই সেই প্রথম আলো- যারা হাসনাত আবদুল হাইয়ের অশালীন ও ইঙ্গিতপূর্ণ গল্প ছাপায়। সেই গল্পের ব্যাপক সমালোচনা হলে তারা গল্পটি প্রত্যাহার করে আর ছোট্ট একটি নোটে দুঃখ প্রকাশ করেই তাদের দায়িত্ব শেষ মনে করে।
এই সেই প্রথম আলো যারা সাভারে ভবনধ্বসে মৃতদের লাশের মিছিল পেছনে ফেলে জলসা করতে পারে! সমালোচনা হলে তারা তাকে চ্যারিটি ঘোষণা দিয়ে টাকা তুলতে পারে এবং পরবর্তীতে সেই টাকা কোথায় ও কিভাবে ব্যয় করা হয়েছে বা আদৌ হবে কিনা তার কোন ব্যাখ্যা আমাদের জানা নেই!
এভাবেই প্রথম আলো ভুল করবে, তার মাশুল দেবে পুরো সমাজ। ছোট্ট একটুকরো ক্ষমা প্রকাশ, ব্যাস, এই!! এভাবে আর কতদিন?
পুরো সমাজের বিবেক, পুরো জাতির অধিশ্বর হয়ে প্রথম আলো যে কর্পোরেট সুশিল সমাজ করতে চায়, সেই তথাকথিত ভদ্রতার মুখোশ ফেলে আমরা পথের ধূলো- জলে বেড়ে ওঠা তরুন সমাজ স্বার্থবাদীতার বাইরে এসে যু্দ্ধাপরাধিদের বিচার চাই। পরোয়া করি না কোন এক জরিপের ভাষায় আমদের কথা কেউ জানলো কিনা! আমাদের দাবী আদায়ের সংগ্রামে প্রথম আলো পাশে না থাকলেও আমদের চলবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে, জনতার সংগ্রাম চলছে, চলবে। বিজয় আমাদের হবেই। জয় বাংলা

শুক্রবার, ৩ মে, ২০১৩

ও হুজুর টুপির নিচে কি? আল্লার কসম দুইখান জিলাপি!

মামুনুর রশিদ

বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রতিটি মানুষের একটু না একটু কন্ট্রিবিউশন আছে। কৃষকের, গার্মেন্টস শ্রমিকের, প্রবাসীদের যেমন ভূমিকা আছে তেমনি ভূমিকা আছে কামারের, কুমারের, মুচির, জেলের, মাঝির, তাঁতির, মেথরের, শিক্ষকের, আইনজীবীর, ডাক্তারের, প্রকৌশলীর, প্রযুক্তিবিদের। এক কথায় মোটামুটি সব পেশা জীবী মানুষের দেশের উন্নয়নে কিছু না কিছু ভূমিকা আছে। কিন্তু এই হুজুর দের দেশের জন্য কন্ট্রিবিউশন কি বুঝতেছি না।
 রাস্তায় মানুষ থামায়া ভিক্ষা কইরা, কোরবানির চামড়ার টাকায়, মানুষের বাড়ীতে মিলাদের তবারক খাইয়া এদের এখন দরিয়া ভরতেছে না। এরা এখন ক্ষমতায় যাইতে চায়।
৭১ এ মুজাহিদ বাহিনীর সদস্য আল্লামা শফি এখন যুদ্ধাপরাধিদের বাচাতে হেলিকপ্টারে করে দেশের জেলায় জেলায় যাচ্ছে। যে মাদ্রাসা গুলো চলে মানুষের দানের টাকায় তার শিক্ষক কি করে হেলিকপ্টারে চড়ে?
সেদিন এক ছোটো ভাই আমাকে বলল, 'ভাই এত মানুষ হেলিকপ্টারে চড়ে তাতে সমস্যা হয় না, হুজুর চড়লেই দোষ'। আমি বললাম, মনে করো যাকে তুমি প্রতিদিন ভিক্ষা দাও, সে যদি ভিক্ষার টাকায় ট্যাক্সি ক্যাবে ঘোরে তাইলে তোমার কেমন লাগবে? সে আর কোন কথা বলল না।
একবার ভাবুন তো ওই টাকা হেলিকপ্টারের পিছনে ব্যয় না করে মাদ্রাসার এতিম ছেলে গুলোর পিছনে কি ব্যয় করা যেত না?